২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে তৎকালীন বিএনপি সরকারের সম্পৃক্ততার অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি এখনো বিশ্বাস করি এটা প্রকাশ্য দিবালোকের মতো সত্য যে সরকারের মদদ ছাড়া এ ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে না। পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিলো। তাতে কোনো সন্দেহ নেই।' রোববার সকালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করতে হবে। গ্রেনেড মেরে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শেষ করে দেবে এটা হবে না। এজন্যই ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার বিচারের রায় বাংলার মাটিতে কার্যকর করা হবে। যেভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে, সেভাবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচারও করা হবে।' তিনি বলেন, 'আমি রাজনীতি করি এ দেশের মানুষের জন্য। তাই আল্লাহ হয়তো সেদিন আমাকে রক্ষা করেছেন, আমার হাত দিয়ে ভালো কিছু করানোর জন্য।' ১৯৮২ সালে চট্টগ্রামে আমাকে হত্যার উদ্দেশে গুলি চালানো হয়েছিল। সেদিনও ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছিল। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, এদেশের মানুষের ভাল কিছু করতেই মহান আলাহতালা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এদেশের মানুষের জন্য সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছি। আমার পিতা এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করে গেছেন। তাঁর আদর্শ আমার প্রেরণা। তিনি জনগণের কাছে তাদের কল্যাণে সবসময় কাজ করে যাওয়ার দোয়া কামনা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, 'তখনকার সময় যারা ক্ষমতায় ছিলো তারা এ হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করেনি। উল্টো সকল আলামত নষ্ট করে দিয়েছিলো। অবিস্ফোরিত গ্রেনেড আলামত হিসাবে সংরক্ষিত না রেখে ধ্বংস করা হয়েছিলো। তাহলে সত্য লুকানোর জন্যই কি এগুলো করা হয়েছিলো।' জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশে এই ধরনের ঘটনা আর যাতে না ঘটে- সেজন্য সরকারে আসার পর আমরা কঠোর অবস্থান নিয়েছি। যত বাধাই আসুক জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান চালিয়ে যাবো।'
তিনি বলেন, 'সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা সেদিন র্যা লি করছিলাম। ওই দিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনও তৎপরতা দেখিনি। অথচ এমনিতে আমরা সভা সমাবেশ করতে গেলে পুলিশ ঘিরে রাখতো। কিন্তু ওইদিন পুলিশের তৎপরতা ছিল না। এমনকি গ্রেনেড হামলার পরে আহত-নিহতদের সাহায্যের জন্যও তারা এগিয়ে আসেনি। উল্টো আমাদের দলের যারা আহত-নিহতদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল তাদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে।'
পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস ছুঁড়বে কেন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, 'নিশ্চয় হামলাকারী ঘাতকদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করতে পুলিশ এটা করেছিল। গ্রেনেড হামলায় আহতদেরও হাসপাতালে ঠিক মতো চিকিৎসা নিতে দেওয়া হয়নি। ঢাকা মেডিকেলে সেইদিন তেমন ডাক্তারও ছিলো না। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে আহতদের ভর্তি করতে চায়নি।' তিনি বলেন, 'এ ঘটনার বিচার না করে তখন জর্জ মিয়াকে নিয়ে নাটক সাজানো হয়েছিলো। জর্জ মিয়ার একার পক্ষ্যে এতো গ্রেনেড বহন করা কি করে সম্ভব ছিলো।'
২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, "আমি বক্তব্য শেষে মাইক রেখে সিড়ির দিকে পা বাড়িয়েছি। তখন গোর্কি (যুগান্তরের প্রধান ফটোসাংবাদিক এস এম গোর্কি) আমাকে বললো, 'আপা একটু দাঁড়ান। আমি ছবি নিতে পারিনি।' আমি দাঁড়ালাম। তখনই হামলা শুরু হলো। আমার পাশে হানিফ ভাই (ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ) ছিলেন। গ্রেনেডের যে স্পি¬ন্টার আমার গায়ে লাগার কথা ছিলো, তা উনার গায়ে লেগেছিলো। টপ টপ করে রক্ত আমার গায়ে পড়ছিলো।"
২১ অগাস্টের হামলায় নিহত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রফিকুল ইসলামের (আদা চাচা) কথা স্মরণ করে করে শেখ হাসিনা বলেন, "ঝড়-বৃষ্টি যাই থাকুক না কেন, আওয়ামী লীগের সকল সমাবেশেই আদা চাচা উপস্থিত থাকতেন।
শেখ হাসিনা নিহত ও আহতদের স্মরণ করে বলেন, 'আমি বক্তব্য শেষ করে সামনের দিকে পা বাড়িয়েছি তখনই হামলাগুলো হলো। একে পর এক গ্রেনেড পড়তে থাকে। ১২/১৩টি গ্রেনেড এসে পড়ে ছিলো। আমার পাশে হানিফ ভাই (ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ) ছিলেন। তিনি আমাকে আড়াল করে রাখেন। গ্রেনেডের স্প্রিন্টার আমার গায়ে না লেগে ওনার গায়ে লেগেছিলো। হানিফ ভাইয়ের সারাগায়ে রক্ত ঝড়ছিলো, সে রক্ত আমার গায়ে এসে পড়ে।'
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাহারা খাতুন, ওবায়দুল কাদের, মতিয়া চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন।
No comments:
Post a Comment